গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান ও আন্দোলনের পটভূমি
গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান ও আন্দোলনের পটভূমি
প্রেক্ষাপট:
২০১০ সালের পর থেকে দেশের ছাত্র ও যুবসমাজ অনলাইনে সংগঠিত হতে শুরু করে। বিশেষ করে ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে আন্দোলন গড়ে ওঠে। সে সময়কার সরকার প্রগতিশীলদের কণ্ঠরোধ করতে ৫৭ ধারার মতো বিতর্কিত আইন পাস করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা শুরু করে। এর ফলে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনের সূচনা:
একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আগ্রহী ছাত্র-যুবকদের এই ক্ষোভ ২০১৩ সালে গণজাগরণে পরিণত হয়। অনলাইনে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠক ও কর্মীদের সমন্বয়ে শাহবাগ আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল- ‘রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই’। এই সময় অনলাইনের অন্যতম সংগঠক ডা. ইমরান এইচ সরকারকে মুখপাত্র করে আনুষ্ঠানিকভাবে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হয়।
নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ:
গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতারা। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন:
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতৃবৃন্দ
যুব ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়নের সংগঠকরা
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক তপন দা (উদীচীর সভাপতি)
অন্যতম সংগঠক আসাদুজ্জাম মাসুম
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সেক্রেটারি শেখ মিজান (বর্তমান ICT Vista-এর প্রতিষ্ঠাতা)
স্লোগানের জনক সনাতন উল্লাহ
সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ কামাল লোহানী, ডা. আসিফ
সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
মীর আহমেদ বিন কাসেম
বাপ্পাদিত্য বসু
মারুফ রশীদ
মোশতাক আহমেদ
আবু সাঈদ খান
নিপুন রায় চৌধুরী
হাসান জাফির তুহিন
গোলাম কিবরিয়া
শাহরিয়ার কবির
আরিফ জেবতিক
- রবিন আহসান
 - সতাব্দি ভব
 - সানজানা
 - লাকী আক্তার সহ দেশের বোধসম্পন্ন মানুষের নেত্রীত্বে। 
 
এছাড়া ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ দেশের সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি সমর্থন জানান এবং আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন।
আন্দোলনের বিস্ফোরণ ও প্রতিদিনের কর্মসূচী:
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে শাহবাগে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: জনসমুদ্রে রূপ নেয় শাহবাগ আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ও সংগঠনগুলো যুক্ত হতে থাকে।
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: 'রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই' স্লোগান দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
৮-১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: দেশের বিভিন্ন স্থানে সংহতি সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হয় এবং কোটি মানুষের সমর্থন আদায় করা হয়।
১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: রাতভর অবস্থান কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: টানা ১৬ দিন পর আন্দোলন সরকারকে বাধ্য করে রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিতে।
আন্দোলনের ফলাফল ও প্রভাব:
১. গণচাপের মুখে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। 2. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হয়। 3. দেশের তরুণ সমাজ রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন হয়ে ওঠে। 4. মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে একটি শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলনের ভিত তৈরি হয়।
গণজাগরণ মঞ্চ ছিল একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে






Comments
Post a Comment