সামাজিক নিয়ম অনিয়ম
সামাজিক নিয়ম ও অনিয়ম একটি সমাজের জীবনধারা এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন। এটি নির্ধারণ করে কিভাবে মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করবে এবং সমাজে কিভাবে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা হবে। সামাজিক নিয়ম ও অনিয়ম সম্পর্কে আলোচনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং ইতিহাস নির্ভর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
সামাজিক নিয়ম ও অনিয়মের সংজ্ঞা
সামাজিক নিয়ম: সমাজে বসবাসরত মানুষদের আচরণ এবং কার্যকলাপের জন্য নির্ধারিত নির্দেশিকা। এটি সাধারণত লিখিত বা অলিখিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমাজের প্রত্যাশা পূরণের জন্য মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
সামাজিক অনিয়ম: যে কোন আচরণ বা কার্যকলাপ যা সমাজের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে। এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং প্রায়ই আইন বা সামাজিক নীতিমালা ভঙ্গ করে।
বিভিন্ন সমাজের নিয়ম ও অনিয়মের উদাহরণ
বহুবিবাহ
- নিয়ম: আফ্রিকার কিছু অংশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে বহুবিবাহ গ্রহণযোগ্য। সেখানে এটি সমাজের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা।
- অনিয়ম: পাশ্চাত্য সমাজগুলো এবং বেশিরভাগ আধুনিক দেশগুলোতে বহুবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
জাতপাত ব্যবস্থা
- নিয়ম: ভারতে দীর্ঘদিন ধরে জাতপাত ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং এটি সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব ফেলত।
- অনিয়ম: আধুনিক ভারতের সংবিধান ও আইন জাতপাত ব্যবস্থাকে অবৈধ এবং অন্যায় বলে ঘোষণা করেছে।
দাসপ্রথা
- নিয়ম: প্রাচীন গ্রিস ও রোমে এবং ১৭শ ও ১৮শ শতকে আমেরিকায় দাসপ্রথা একটি স্বাভাবিক এবং বৈধ প্রথা ছিল।
- অনিয়ম: আজকের যুগে দাসপ্রথা বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ এবং এটি একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত।
নিয়ম মানুষের কল্যাণে হওয়া উচিত কেন?
সামাজিক সাম্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
নিয়ম যদি মানুষের কল্যাণে গড়ে ওঠে, তাহলে তা সমাজে সাম্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিগত বা লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইনগুলো সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে এবং সবাইকে সমান সুযোগ প্রদান করে।
সামাজিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা
মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম সমাজে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, মানবাধিকার সনদ প্রণয়ন সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ইতিহাস নির্ভর উদাহরণ
মহিলা ভোটাধিকার
বিংশ শতাব্দীর পূর্বে বেশিরভাগ দেশেই মহিলাদের ভোটাধিকার ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২০ সালে ১৯তম সংশোধনীর মাধ্যমে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। বর্তমানে মহিলাদের ভোটাধিকার একটি প্রতিষ্ঠিত নিয়ম এবং এর বিপরীত কোন পদক্ষেপকে অন্যায় বলে গণ্য করা হয়।
উপসংহার
নিয়ম এবং অনিয়মের ধারণা সমাজের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে। সময়ের সাথে সাথে সমাজ পরিবর্তিত হয় এবং সেই সাথে নিয়মও পরিবর্তিত হয়। তবে, যে নিয়মগুলি মানুষের কল্যাণে গড়ে ওঠে, সেগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সমাজে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Comments
Post a Comment