মানবতার কবি কাজী নজরুল
নজরুল ইসলাম ছিলেন মানবতার কবি। তাঁর রচনা সাম্প্রদায়িক বিভেদ, হিংসা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এক অনন্য প্রতিবাদ। তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি ধর্ম, বর্ণ, ও জাতির ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন।
নজরুলের জীবন ও সাহিত্য থেকে মুসলিমরা যে অনুপ্রেরণা নিতে পারে, তা হলো তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবতাবাদ। তিনি শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ—সব ধর্মের মানুষকে এক কাতারে দেখতে চেয়েছেন। নজরুলের লেখা ইসলামী গান যেমন মুসলিমদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে, তেমনি তাঁর শ্যামা সংগীত হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রিয়। তিনি দেখিয়েছেন, ধর্মের পরিচয় একজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করে না; বরং মানুষের ভালোবাসা, সততা, ও ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকারই তাকে মহান করে তোলে।
যাঁরা নজরুলকে কেবল মুসলিম হিসেবে শ্রদ্ধা করেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত, নজরুল নিজে কখনো এভাবে নিজেকে সীমাবদ্ধ করেননি। তিনি ভালোবেসে প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেছিলেন, হিন্দু ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, এবং তাঁর রচনায় সব ধর্মের সুরই বাজিয়েছেন। নজরুলের কাছে ধর্মের আসল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কল্যাণ।
যদি নজরুল হিন্দু পরিবারে জন্ম নিতেন, তাহলে কি তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে মেনে নেওয়া হতো? এ প্রশ্নের উত্তরে আসল সত্য হলো, একজন কবি বা মানুষের পরিচয় তাঁর জাত বা ধর্ম দিয়ে নয়, তাঁর কাজ দিয়ে। নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধই তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে আমাদের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মুসলিমদের উচিত নজরুলের জীবন ও সাহিত্য থেকে শিক্ষা নেওয়া—কীভাবে নিজের ধর্মের প্রতি অনুগত থেকে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যায়, কীভাবে মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা যায়। বিভেদের রাজনীতি নয়, নজরুলের ঐক্যের বার্তা ধারণ করলেই মুসলিমরা সত্যিকার অর্থে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
শেখ মিজান
(০১.০৮.২০১৭ইং দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত লিখা)
Comments
Post a Comment